ঘটক ধরা বিয়ের আশ্বাস, পাত্রের দুর্ঘটনা, আর তারপর জরুরি চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা সবকিছুই ছিল পূর্বপরিকল্পিত নাটক। ঘটক সেজে বিয়ের ফাঁদে ফেলে যশোরের অভয়নগরের এক যুবকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল সংঘবদ্ধ এক প্রতারক চক্র। তবে বেশি দূর পালাতে পারেনি তারা। খুলনার ফুলতলা থেকে চক্রের মূল হোতা ইয়াছিন আরাফাত যশোরের ডিবির জালে ধরা পড়েছে। প্রতারক ইয়াছিন (২০) খুলনার ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রাম কসবা গ্রামের সৈয়দ ইসরাইল হোসেন ওরফে রাজুর ছেলে।
অভয়নগর থানার বারান্দি পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী নয়ন হোসেন জানান, তিনি স্থানীয় একটি সারের দোকানে চাকরি করেন। কয়েকদিন ধরে তার ভাগ্নির বিয়ে নিয়ে আলোচনা চলছিল। এমন সময় একদিন হঠাৎ একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। অপরপ্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ঘটক পরিচয় দিয়ে দুটি মোবাইল নম্বর দেন এবং বলেন, পাত্রপক্ষ যোগাযোগ করবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। নিজেকে পাত্রের বাবা পরিচয় দিয়ে ব্যক্তি জানান, তারা শুক্রবার পাত্রী দেখতে আসবেন। নয়নের পরিবারের মধ্যেও আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
সেই রাতেই আবার ফোন আসে। এবার পাত্রের বাবা জানান, ছেলে ঝিকরগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে এবং ড্রাইভারের অবস্থা সংকটজনক। দ্রুত চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দরকার, যা পরে ফেরত দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। নয়নকে একটি মোবাইল নম্বরে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলা হয়। নয়ন বিশ্বাস করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে মোট ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হলে সন্দেহ জাগে। তখন তিনি ফোন নম্বরগুলো বন্ধ পান এবং বুঝতে পারেন, এটি একটি চক্রের প্রতারণা।
নয়ন হোসেন পরে বিষয়টি যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহানকে অবহিত করেন। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে ডিবি ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটকে তদন্ত ও অভিযানের নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভুঞার নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। টিমের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই শেখ আবু হাসান এবং এএসআই (নিঃ) সৈয়দ শাহীন ফরহাদ। মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটের দিকে খুলনার ফুলতলার পয়গ্রাম কসবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. ইয়াছিন আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে। আটক ইয়াছিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। পরে তাকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভুঞা জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এদের আরও অনেকেই রয়েছে। তাদের ধরতে ডিবি মাঠে রয়েছে।